The Parallel Universe: Emporium দ্বীন

 The Parallel Universe: Emporium দ্বীন
প্যারালাল ইউনিভার্সের কোন এর পৃথীবিতে মানুষগুলো সুন্দর একটা নিয়মে বাস করে। সেখানে একজন নবজাতক জম্ম নেয় আল্লাহর নাম শুনে। তাদের পিতা-মাতারা তাদের ছোট থেকে এটা শিখায় না যে,
“সদা সত্য কথা বলিবে ... মানুষের উপকার করিবে ... কাউকে গালি দিবে না ...”
বরং তারা এটা শিখায় যে,
“একজন সৃষ্টিকর্তা আছেন আল্লাহ যে তোমাকে আমার কাছে পাঠিয়েছেন এই দুনিয়াতে লালন পালনের জন্য যাতে তুমি দুনিয়ার বিষয়গুলো বুঝে গড়ে উঠতে পারো আর এর সাথে সাথে শুধুমাত্র ঐ সৃষ্টিকর্তারই কথা শুনবে ও মানবে আর ইবাদাত করবে আর শয়তানের সাথে জ্ঞান ও আল্লাহর সাহায্য দ্বারা যুদ্ধ করবে।”

বাচ্চারা এটা ভালো করে বুঝে যায় যে তাদের মা-বাবা তাদের Temporary Guardian, আসল সত্ত্বার নিকট তো মৃত্যুর পরে দাড়াতে হবে। তাই খেলার মধ্যে কেউ যদি বলে  “আল্লাহর কসম” তুমি আউট? তখনই এই ছোট বাচ্চাদের মনে আল্লাহর নামের একটা মর্যাদা ভেসে উঠে তারা সাথে সাথে মেনে নেয় তাদের খেলার পরিণতি। এরা কারো সাথে সমস্যা তৈরি করে না কাউকে কষ্টে ফেলে নিজেরা হাসে না কারন এরা জানে উপরে একজন আছেন যিনি সব দেখছেন, শুনছেন। অবাক! তাদের এই অদৃশ্যের উপর অপরিসীম বিশ্বাস দেখে।

সমাজে কিশোর-যুবক-বৃদ্ধ সকলেই ফজরেই উঠে সলাতের জাম’আতে দাঁড়িয়ে যায়। মা তার মেয়েকে ডাক দেয় সলাতের জন্য, আবার বাবা তার ছেলেকে উঠিয়ে দেয় কাতুকুতু দিয়ে। এটা একটা আনন্দ। সলাত শেষে তাদের মধ্যে হালকা কথা বার্তা হয় তারা সুর্য উদয়ের অপেক্ষা করে তাদের বিশ্বাস এই সময়টুকু তাদের জন্য সওয়াব রয়েছে। সকালের আলোর সাথে সাথে কেউ হয়ত অফিসের কাজে যায়, কেউ ক্ষেতে, কেউ পড়াশুনার কাজে, কেউ হয়ত ব্যবসায়, কেউ হয়ত নিজের প্রয়োজনে অন্য কিছু ভাবে।
মেয়েগুলো কেমন যেন নম্র আর ঝিনুকে ঢাকা মুক্তোর মত। এদেরকে সহজে বাহিরে দেখা যায় না এরা বাসায় নিজেদের মত পড়াশুনা করে, ঘরের কাজগুলো সামলে নেয়। প্রয়োজনে বাহিরে গেলে একটা আল্লাখাল্লা পোশাক পড়ে যেন তাদের সৌন্দর্য প্রকাশ না হয়। এদের আত্মসম্মানবোধ অনেক বেশি। নিজেকে কেন অন্য পুরুষের চোখে সহজে বিলিয়ে দেব??

মাসজিদগুলো সবসময় খোলা থাকে, কেউ এসে একবেলা ঝাড়ু দিয়ে যায়, ইমাম এসে মাঝে মাঝে তদারকি করে, কেউ এসে সলাত পড়ে, ক্বুর’আন পড়ে, প্রতিদিনই হাদিসের উপর দারস হয়, বাচ্চারা এখানে সেখানে ছোটাছুটি করে কিন্তু সলাতের সময় সবাই ঠান্ডা। বৃদ্ধরা আশেপাশের বাগানে ঘুরে-বসে বেড়ায় তাদের মুখে অভিজ্ঞতার কথা আর মনে আল্লাহর জিকির থাকে।

অফিস আর ব্যবসায় সবাই মন দিয়ে কাজ করে। দ্বীনভিত্তিক অর্থনীতি যেখানে সামান্য সুদের ছায়া নেই। ওয়াক্ত হলে কখনো মালিক নিজেই উঠে সবাইকে সলাতের জন্য তাগাদা দেয় আবার কখনো কর্মচারীরা তাগাদা দেয়, এখানে পিওন, বস, কর্মচারী এগুলো শুধুই designation এইই থাকে কিন্তু অন্তরে সবাই সবাইকে সম্মান করে দ্বীনের বিচারে। যেখানে বস তার পিওনের ইমামতির পিছনে সলাত আদায় করে।

স্কুল-কলেজ-ইউনিভার্সিটি বলতে এমন এক শিক্ষা ব্যবস্থা যেখানে নীতি একটাই,
“তুমি প্রথমত একজন মুসলিম, এরপর তুমি তোমার পেশায় হয় ডাক্তার, ইঙ্গিনিয়ার, ব্যবসায়ী ... ...”
ছোট থেকে কাউকেই চাপিয়ে দেয়া হয় না কে কি করবে। যার যেটা ভালো লাগে সেটা শুধুমাত্র হালাল হারম চিন্তা করে সেই শিক্ষায় তাদের শিক্ষিত করা হয়। এতে সমাজে শিক্ষায় সাম্যবস্থা থাকে। শিক্ষা হোক, ব্যবসা হোক, চাকুরী হোক আর যে কোন কাজেই হোক “NO COMPETITION” এই বিষয়টা মাথায় রেখে সবাই কাজ করে। এতে হিংসাবোধও কম হয়।

একজন গরীব অসহায় পঙ্গু মানুষের জণ্য শুধু এতটুকুই যথেষ্ট যে সে তার অবস্থায় পরিচয় দিচ্ছে, সাথে সাথে এটা সমাজের একজন ইমাম জারি করে দেয় কিভাবে ঐ অসহায়কে সাহায্য করা লাগবে। সমাজের ঐ মানুষগুলো কখনো তাদের অবহেলা করে না বরং তাদের অন্তরে শুকরিয়া থাকে তারা ভাবে
“আজ যদি আমি ঐ রকম অসহায় হতাম আল্লাহ যদি তার জাগায় আমাকে রাখতো ... এটা আল্লাহর একটা নি’আমাত”।
তারা যখন কিছু চায় শুধুমাত্র আল্লাহর কাছেই চায়।

ঐ সমাজের মজার একটা বৈশীষ্ট্য হল, সেখানে একজন কুলি-মুচি-ড্রাইভার-ফেরিওয়ালা পর্যন্ত ক্বুর’আন ও হাদিসের এতটুকু জ্ঞান রাখে যে সে সেটা দিয়ে অন্যকেও দাওয়াত দিতে পারে। কেউ ভুল করলে সেখানে সর্বপ্রথম যেটা দেখানো হয় তা হল, “ক্ষমা ও দয়া” এরপর তাকে “নাসীহাত” করা হয়। কটাক্ষ দিয়ে দ্বীন ইসলাম চলে না।

বিনোদনের জণ্য ছেলেদের মাধ্যম অনেক জাগায়, কেউ মাঠে, কেউ পার্কে, কেউ হয়ত ছাদে, কেউ রাস্তায়। কিন্তু তাদের সবার চিন্তা থাকে অব্যশ্যই রাস্তার হক আদায় করতে হবে, রসুল (সঃ) বলেছেন আদায় করতে। নারীদের জন্য কিছু খোলা জায়গা থাকে যেখানে পর্দায় আবৃত মাঠ তারাও নিজের ইচ্ছা মত দৌড় ঝাপ খেলে, হাসি-ঠাট্টা করে, এ এক নিভৃত জায়গা যেখানে বাইরের ওয়াস ওয়াসা আসে না।

“আল্লাহ বলেছেন ... রসুল (সঃ) বলেছেন ...” এই কথা গুলো হয় তাদের সম্বল।
একটা জুতো কিনতে গেলেও তাদের মধ্যে ইস্থিখারা সলাত আদায় করার মনোভাব থাকে। তারা ভাবতেই পারে না কিভাবে আল্লাহর সাহায্য ছাড়া একটা দিন চলবে।
অসুস্থ হলে কষ্ট হলেও এই অসুখ অন্তরে শান্তি অনুভব করে “আল্লাহ তার গুনাহ গুলো যে মাপ করে দিচ্ছেন (আলহামদুলিল্লাহ)” একজনের উপর সালাম, কারো জন্য ক্ষমার দু’আ, সুস্থতার দু’আ, কল্যানের দু’আ এগুলো যেন নিত্যনৈমিত্তিক বিষয়।

রাস্তার প্রানীগুলোও না খেয়ে মরে না। যখনই কেউ দুই লোকমা খায়, এক লোকমা তাদের জণ্য তুলে দেয়। মানুষ আর প্রানী এদের মধ্যবর্তী ভালোবাসা যেটা আল্লাহ দিয়ে দিয়েছেন সেটা সারা দুনিয়ার সম্পদ দিলেও পাওয়ার নয়।

সমাজের মানুষের মধ্যে “হিসাব বিষয়টা খুব কঠিন লাগে,
“দুনিয়াতে তারা হিসাব মিলাতে হিমশিম খাচ্ছে, হাশরের হিসাবে কি হবে?”।
একথাগুলো মনে করে রাতে তাহাজ্জুদে কান্নায় নিজেদের অস্থির করে তোলে। একটা সবালিকা মেয়ে, যার সামনে এখন বিয়ের সময়, আনন্দঘণ মুহুর্ত, সেও কেমন যেন কিয়ামাতের কথাগুলো শুনে ভয় পেয়ে যায়। আসিয়া, মারিয়াম,খদিজা, ফাতিমাদের ত্যাগ শুনে তাদের অন্তর শুকিয়ে আসে।

“তুমি যেখানেই থাকো না কোন আল্লাহকে ভয় করো”- এই একটা কথা যেন রাতে কোন যুবককে দমিয়ে দেয় খারাপ কাজ করতে, মেয়েদের দিকে তাকাতে কিংবা অকারনে কুকর্ম করতে। রাতে সবাই যখন কাজ-পড়া শেষে বাসায় ফিরে আসে তখন কেউ হাদিসের বই নিয়ে বসে, কেউ হয়ত ক্বুরআন পড়ে, কেউ আল্লাহর নিদর্শন চিন্তা করে চোখ দিয়ে পানি ফেলে, কেউ ইসলামি ইতিহাস শোনায়, কেউ লিখালিখি করে, কেউ নিজের হিসাব করে। রাত একটু বাড়লেই এশার পর কেউ তেমন জেগে থাকে না। এক প্রশান্তিময় রাত আসে সবাই আল্লাহরকে স্মরণ করে ঘুমিয়ে পড়ে পরের দিনের জণ্য। সবাই ভাবে, কাল সকালে হয় কেউ ঘুম থেকে উঠবে আবার কেউ আল্লাহর নিকট অনন্তের পথে যাত্রা করবে, তবে যাই হোক যাত্রাটা যেন শান্তির হয় এটাই তাদের দু’আ।

এই সমাজের নিজস্ব আলাদা সংস্কৃতি-ভাষা ছিল, তাদের নিজস্ব চিন্তা-চেতনা ছিল, তাদের নিজস্ব খাদ্য-পানীয়, চলাফেরা, পোশাক-আশাক, রীতি-নীতি ছিল। কিন্তু সবার উপরে এদের মানদন্ড হল “এসব কিছুই তারা ক্বুর’আন ও হাদিসের কষ্টি পাথরে যাচাই করে নেয়”। এরাও কবরে ফুল দিত, মৃতদের জণ্য মিনার তৈরি করত, তাবীজ পড়ত, মিলাদ পড়ত, সুদ দিন-নিত, হারমভাবে চলত, দাড়ি চাছতো, মানুষের হক্ব মেরে খেত...
কিন্ত প্রশ্ন হলঃ
“এসব কি ক্বুর’আন ও হাদিসে রয়েছে? এগুলোর জণ্য কি আমার জাহান্নাম রয়েছে? এগুলো কি আল্লাহর বিধানের সাথে সাংঘর্ষিক?”
এই এতটুকুই যথেষ্ট ছিল তাদের জণ্য এই জাহেলিয়াত ত্যাগ করার জন্য। এরকম হাজার শিরকি-কুফরি বিষয় সমাজের মানুষগুলো একে একে খুজে বের করে যাচাই বাছাই করে ছুড়ে ফেলে দিয়েছে। কি দরকার ঐ সব রীতিনীতি – শিক্ষা অর্জন আর সংস্কৃতি জেনে-মেনে যদি সেটা আল্লাহর বিরুদ্ধে যায়? লাভ কি? আমি মরে গেলে কেউ আমাকে তো আর বাঁচাতে আসবে না!!

তাদের ভিতরে আশ্চর্য এক অনুভূতি আল্লাহর জন্য একটা অন্যরকম টান। কেউ মারা গেলে মমতার জন্য চোখ দিয়ে পানি পড়ে কিন্তু তার চেয়ে বেশি কষ্টে ভুগে যদি সেই মৃত ব্যাক্তিটি জাহান্নামে যায় তাহলে কি হবে এই ভেবে? সবাই জানে, এই দুনিয়ার সবাই জান্নাতে যাবে না অধিকাংশরাই জাহান্নামী; কারো পরিবারের বাবা, অন্য পরিবারের মা, অমুক পরিবারের ছেলে, অমুক পরিবারের মেয়ে এভাবে এক জায়গার স্বামী আর অন্য জায়গার স্ত্রী, কারো সন্তান কারো দাদা, কারো নানু জান্নাতে যাবে। অপরিচিত এক বারযাখে সবার নতুন করে দেখা হবে। কিন্তু কিছুই করার নেই এটাই তাক্বদীর। এভাবেই দিন-রাত কেটে যায় সমাজের মানুষের একটা জান্নাত লাভের আশায়।

শুধুমাত্র একটা সমাজ যারা তার পরিবারকে শিখায় “আল্লাহ যা বলেছেন এবং রসুল (সঃ) যা বলেছেন”। একটা মাত্র সমাজ যারা “আল্লাহ দেখছেন, শুনছেন, তিনি হিসাব গ্রহণকারী, তিনি যেমন দয়ালু তেমন কঠিন শাস্তি দানকারী, যেমন ক্ষমাশীল তেমনই পাকড়াওকারী” এই সিফাতগুলো ভালোভাবে উপলব্ধি করে। এমন এক সমাজ যারা “মহাকাশ- মাটি-পানি- ঔষুধ বিজ্ঞান নিয়ে পড়াশুনা করে তেমনি তাদের অন্তরে কুর’আনের আয়াতের প্রভাব প্রতিনিয়ত বেজে উঠে”। এমন এক সমাজ যারা অনেক ব্যস্ততার মধ্যেও “রসুল (সঃ) এর সুন্নাহ” বাদ দেয় না। এমন এক সমাজ যারা ভুলের জন্য “নাসীহাত” আনন্দে গ্রহণ করে আবার পরস্পরকে “ক্ষমা” দেখায়। এমন এক সমাজ যেখানে সবার একটা বিষয় স্পষ্ট, “দুনিয়া ক্ষনস্থায়ী, আখিরাত অনন্তকালের জন্য- তাই জান্নাতে যেতেই হবে”।

অবশেষে ভূগোলকটা একটা বিশাল পাক খেল কিন্তু ঐ প্যারালাল ইউনিভার্সের পৃথিবীটা কোথাও পাওয়া গেল না এবং যাবেও না। সেই সাথে এই কাহিনীর পথ শেষ হল। মনে রাখা দরকার এটা আসলে নেহায়েত একটা প্রত্যাশার গল্প, চাক্ষুষ শিক্ষার সহায়ক মাত্র।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

নবীনতর পূর্বতন