WOW! I didn’t know That: জাতির পিতা বিষয়ক বিভ্রান্তি

আমাদের (মুসলিম) জাতির পিতা ও জাতীয়তাবাদ বিষয়ক বিভ্রান্তি
আস সালামু আলায়কুম। আলহামদুলিল্ললাহ, ওয়াস সলাতু ওয়াস সলামু আ’লা রসুলুল্লাহ। আ’ম্মাবাদ,
যেহেতু আমরা এক আল্লাহর সর্বোত্তোম সৃষ্টি তাই প্রথমে তাঁর দেয়া বৈশিষ্টের উপর আমাদের নাম নির্ধারন করতে হবে এবং সেটা হলঃ আমরা প্রথমেই মুসলিমএরপরে আমাদের ভাষা বা দেশ বা বংশীয় পরিচিত থাকতে পারে কিন্তু সেটা কোন জাতীয়তাবাদ বা বর্ণ-বংশবাদ এর গৌরবের জন্য নয় শুধুই এক জাতি সাথে অন্য জাতির পরিচিতির জন্য যে, আমি বাঙ্গালী অমুক আরবীয়া, অমুক আমেরিকান, অমুক জাপানিজ।অথচ অনেকেই শাইত্বনের চক্রান্তে পরে মুসলিম হওয়া সত্ত্বেও না জেনে না বুঝে হুজুগে অনেক রকম পিতা, মাতা, দিবস ইত্যাদি বানিয়ে বানিয়ে পালন করা শুরু করে দেয় যেটা পরবর্তীতে ইসলাম এর মূল শিক্ষায় আঘাত হানে। এবং এক পর্যায়ে শিরক-কুফুরী পর্যন্ত নিয়ে যায়। তাই যারা আসলেই এই পিতা বিষয়ক বিভ্রান্তি ও জাতীয়তাবাদের খপ্পরে রয়েছেন সেই মুসলিমদের জন্য দালীলভিত্তিক সংক্ষিপ্ত একটি লিখা। আল্লাহ আমাদের এই অল্প লিখাতেই বারকাত দিন এবং শুধুমাত্র একনিষ্ঠ মুসলিম হওয়ার তাওফীক্ব দিন, আমীন।    


একটি অতি গুরুত্বপুর্ন বিষয় যা আমাদের সমাজে ও দেশে মহামারী রুপে দেখা দিয়েছে অথচ এ ব্যাপারে সাধারন মুসলিম সমাজ কোন স্পষ্ট দালীলভিত্তিক তথ্য প্রদান করতে পারছে না। বরং সবাই এই বিভ্রান্তিতে পরে নিজেদের ঈমান নষ্ট করে দিচ্ছে। বিষয়টি হলঃ  
আমাদের জাতির পিতা কে?
প্রথমত, আমাদের রব যিনি আমাদের সৃষ্টি করেছেন এবং যার কাছে আমাদের একদিন ফিরে যেতে হবে তাঁর কথা বলা যাকঃ
আল্লাহ ও তাঁর রসূল কোন কাজের আদেশ করলে কোন ঈমানদার পুরুষ ও ঈমানদার নারীর সে বিষয়ে ভিন্ন ক্ষমতা নেই যে, আল্লাহ ও তাঁর রসূলের আদেশ অমান্য করে সে প্রকাশ্য পথভ্রষ্ট তায় পতিত হয়। (সূরা আহযাবঃ ৩৬)
এর অর্থ স্পষ্ট এই যে, আল্লাহ যেটা বলেছেন এবং রসুল (সঃ) স্পষ্ট যেটা জানিয়ে দিয়েছেন তার বাইরে আমরা (মুসলিম) কোন উচ্চ-বাচ্চ্য করলেই পথভ্রষ্ট। এবং পথভ্রষ্ট মানেই জাহান্নাম। (আপনি- আমি যতই নামাজ-রোজা-হজ্জ-যাকাত পালন করি না কেন!!)
এবার আসি প্রথম বিষয়ঃ  আমাদের জাতির পিতা কে?
জাতি অনেক প্রকার হতে পারে এর মধ্যেঃ একটি দেশের ভাষার কারনে জাতি রয়েছে যেমনঃ বাংলা ভাষা তাই নাম বাঙ্গালী জাতি, আবার কারো নাম দ্বারা জাতি হতে পারে যেমন ইয়াহুদী জাতি,  আবার ভাষা+এলাকার দ্বারা জাতি যেমন আরব, সুমেরীয়ান, আবার অঞ্চলভিত্তিক জাতি যেমন রোমান,মায়ান ইত্যাদি। মহাজ্ঞানী আল্লাহ আমাদের বিভিন্ন জাতি ও গোত্রে তৈরি করেছেন। এর পিছনে মহাত্ম্য এই যে আমারা যাতে একে অন্যর সংস্কৃতি, ইতিহাস সম্পর্কে জানতে পারি।

যেমন আল্লাহ বলেনঃ
হে মানব, আমি তোমাদেরকে এক পুরুষ ও এক নারী থেকে সৃষ্টি করেছি এবং তোমাদেরকে বিভিন্ন জাতি ও গোত্রে বিভক্ত করেছি, যাতে তোমরা পরস্পরে পরিচিতি হও। নিশ্চয় আল্লাহর কাছে সে-ই সর্বাধিক সম্ভ্রান্ত যে সর্বাধিক পরহেযগার। নিশ্চয় আল্লাহ সর্বজ্ঞ, সবকিছুর খবর রাখেন।(সূরা হুজুরাতঃ ১৩)
তাই আমাদের বুঝতে হবে এই বিভক্তিকরণ শুধুমাত্র একে অপরের সাথে জ্ঞান বিনিময় ও পরিচিতি লাভের জন্য কোন প্রকার জাতীয়তাবাদের জন্য না।
এবার আমারা যে মূল জাতি হিসেবে দুনিয়াতে এসেছি সেই মুসলিম জাতির পিতা কে (যেহেতু আমরা দাবি করি আমরা মুসলিম) সেটা আল্লাহই বলে দিয়েছেনঃ
“... ... তোমরা তোমাদের পিতা ইব্রাহীমের দ্বীনে কায়েম থাক। তিনিই তোমাদের নাম
মুসলিম রেখেছেন ... ...” (সূরা হাজ্জঃ ৭৮)

অর্থাৎ ইবরাহীম(আঃ) আমাদের মুসলিম নাম রেখেছেন ও তিনিই আমাদের জাতির পিতা, আর কেউইই নন। 


তবে যারা মনে করেন আমরা বাঙালি আর বাঙ্গালী জাতি হিসেবে আমাদের পিতা আলাদা একজন আছেন তাদের এই ভ্রান্ত ধারনা দূর করার জন্য একটি দালীল দিচ্ছি (যে অন্তর নিরপেক্ষ রেখে আল্লাহর জন্য বুঝতে চায় আল্লাহ তাকে হিদায়াত দেন)

ভাষা বা দেশ বা সংস্কৃতিগত দিক দিয়ে কোন মুসলিম নিজেদের আলাদা নাম দিয়ে জাতীয়তাবাদ-দল তৈরি করে নিজেদের মনমত দিবস-ধর্ম-পিতা পালন করার অধিকার রাখে না, যদি সে আসলেই মুসলিম হয়। কেননা যখনই কোন জাতিগত পিতা বা আদর্শ ব্যাক্তিত্ব্যকে বানানো হয় তখনই সেটাকে সবাই আদর্শ হিসেবে মেনে চলা শুরু করে এক পর্যায়ে ইসলামের আদর্শের চাইতেও ঐ বানানো মতাদর্শকে প্রাধান্য দিয়ে সবাই চলতে চলতে এক পর্যায়ে পথভ্রষ্ট জাতিতে পরিনত হয়।  এভাবেই আল্লাহর আযাব-গজব নেমে আসে।
 দুটি বিষয় উল্লেখ করলেই বুঝা যাবে আসলে জাতি কি জিনিষ,
এক, ইবরহীম (আঃ) এর ভাষা আরবী ছিল না কেননা তার পুত্র ঈসমাঈল (আঃ) ছিলেন সর্বপ্রথম স্পষ্ট আরবী ভাষার (ক্বুরইশী ভাষা) প্রবর্তনকারী। পরবর্তীতে এই আরবী ভাষায় কুর’আন নাজিল হয়। অথচ আল্লাহ ইবরহীম (আঃ) কে অনারব হওয়া সত্ত্বেও মুসলিম জাতির পিতা বলেছেন। এখানে ভাষা কোন বিষয় না বরং ইবরহীম (আঃ) এর তাক্বওয়াই ছিল মূল।  
দুই, রসুল (সঃ) এর বিদায় হাজ্জ এর ভাষন থেকে পাওয়া যায়ঃ
হে লোকসকল, তোমরা শোনকোন আরবের উপর অনারবের শ্রেষ্ঠত্ব নেই আবার কোন অনারবের উপরও আরবের শ্রেষ্ঠত্ব নাই, কোন কালোর উপর সাদার এবং সাদার উপর কালোর শ্রেষ্ঠত্ব নেই। কেননা, সবাই আদম থেকে এবং আদম মাটি থেকে সৃষ্ট। শ্রেষ্ঠত্ব যাচাইয়ের মাপকাঠি হল তাকওয়া। 

এখানে জাতি-বর্ন-গোত্র-বংশ-ভাষা কোনকিছুইকেই প্রাধান্য দেয়া হয়নি শুধুমাত্র আল্লাহর প্রতি ভয় ছাড়া।  
আর জাতীয়তাবাদ স্পষ্টই হারম।
তাই যারা বলে,
“আমরা মুসলিম কিন্তু আমাদের দেশ-জাতি-ভাষা-বর্ন হিসেবে আলাদা একজন পিতা আছেন সেক্ষেত্রে একটু ভেবে দেখা উচিত এই পিতা কি আল্লাহ ও তাঁর রসুল(সঃ) দ্বারা সমর্থিত?? নাকি এটা শাইত্বনের কুমন্ত্রনায় পরে আমরা নিজেরা বানিয়ে নিয়েছি? যেভাবে শিয়ারা (ইরান) তাদের ১২ ইমামদের বানিয়ে তাদের আদর্শ মানতে মানতে এক পর্যায়ে তাদের রবের (আল্লাহর) মর্যাদায় উঠিয়ে দিয়েছে(নাউ’জুবিল্লাহ)”

এ বিষয়ে তর্ক করলে অনেক করা যায় কিন্তু আল্লাহ ও তাঁর রসুল যতটুকু নির্দেশ দিয়েছেন তার বেশি বুঝতে গেলে আখিরাতে কি অবস্থা হবে সেটা আমাদের প্রত্যেকেরই ভেবে দেখতে হবে।

ভেবে দেখুন, আল্লাহ আপনাকে একদিন মৃত্যু দিয়ে তাঁর সামনে হাজির করে যদি প্রশ্ন করেন, “কেন তুমি অমুককে জাতির পিতা বানালে?অথচ আমি তোমাদের পিতা নির্ধারন করে দিয়েছি!” তখন দুনিয়ার এই বানানো পিতার জন্য আখিরাত আফসোস এর কারণ হবে।
আল্লাহ আমাদের অন্তরসমূহকে নরম করে বুঝার তাওফীক্ব দিন এবং সত্য গ্রহণে লজ্জা-ভয় দূর করে হিদায়াতের পথে অটল রাখুন। আমীন
নবীনতর পূর্বতন